ধর্ম একটি বিশ্বাস। ভিন্ন ভিন্ন মানুষ ভিন্ন বিশ্বাস অনুসরণ করেন। সকল ধর্মই শান্তির কথা বলে। ইসলাম ধর্মেও শান্তির কথা বলা হয়েছে। ধর্ম নিয়ে কেউ যাতে বাড়াবাড়ি না করে সে কথা মহানবী তাঁর বিদায় হজ্বের ভাষনেও বলে গেছেন।
কিন্তু কী হচ্ছে?
খবরে দেখলাম সিলেটে এক হিন্দু ধর্মালম্বী খাবারের হোটেল খুলেছে বলে জুমার নামাজের পর তার ওপর হামলা করা হয়েছে। শাহবাগে এক ব্যক্তি রমজান মাসে দিনের বেলায় শরবত বিক্রি করছেন বলে তার ওপর চড়াও হয়েছেন সাদা পোশাকের আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কর্মকর্তা। ডিএনসিসির মেয়র সেদিন বললেন রমজান মাসে সকল হোটেল- রেঁস্তোরা, ক্লাব-বার বন্ধ রাখতে হবে। দিনাজপুরের ডিসি বলেছেন মদ বিক্রি বন্ধ রাখতে।
তো রোজা মানে তো সংযম করা। সবকিছু আপনার আশেপাশে স্বাভাবিক থাকবে, আপনি তা সত্তেও সংযম করবেন, তাই তো হবার কথা। সেটাই তো ঈমানি শক্তি। তাহলে সবকিছুতে চাপিয়ে দেয়া বা জোর-জবরদস্তি করা কেন?
রোজা রাখার উদ্দেশ্য হলো- আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভ করা, পাপ কাজ থেকে বিরত থাকা এবং নিজেদের কামনা-বাসনা বা ভোগ-বিলাস নিয়ন্ত্রণের প্রশিক্ষণের মাধ্যমে পরহেজগারি বা তাকওয়া বৃদ্ধি করা। কিন্তু রোজা রাখার নামে তো অনেকেই ভোগ- বিলাস আরো বাড়িয়ে করেন। সেহরি বা ইফতার পার্টি তো চলেই, খোদ প্রতিটি পরিবারে অন্যান্য মাসের খরচের চাইতে রমজান মাসের খরচ বাড়ে। অথচ সংযমের কারনে তা কমার কথা ছিল।
আপনি নিজে রোজা রাখুন, অন্যকে ধর্মীয় এই কাজটি পালনে আহ্বান করতে পারেন, জোর-জবরদস্তি কিংবা পালনে বাধ্য করতে পারেন না। এমনকি সে যদি মুসলিমও হয়।
বিবিসি বাংলা একটা প্রতিবেদন করেছেন কুষ্টিয়ার এক নারীকে নিয়ে, যিনি বংশানুক্রমে লাঠিয়াল বা লাঠি খেলেন। সেই প্রতিবেদনের নিচে দেখলাম, শত শত কমেন্টস যার অধিকাংশই অবমাননাকর, অশ্রাব্য, অশ্লীল। ধর্মের দোহাই দিয়ে তাকে গালাগালি করা হচ্ছে। এটা কেমন ধর্মীয় চর্চা বা কেমন ধর্মীয় আহ্বান?
ময়মনসিংহে শশীলজের সামনে এক নারীর ভাস্কর্য নিয়ে তুলকালাম অবস্থা দেখছি গত কয়েকদিন ধরে। মুখে প্রগতিশীলতার বুলি আওড়ান, চেনা এমন মানুষকেও এর বিরোধিতা করতে দেখেছি। ভাস্কর্যের নিতম্ব বা স্তন দেখে যারা উত্তেজিত হয়ে ওঠে তাদের ঈমান তো তাহলে নরবরে বলেই ধরে নিতে হয়। নফস’কে এরা নিয়ন্ত্রণ করতে পারে না।
এরকম আরো অসংখ্য বিষয় দেখছি, শুনছি আর ভাবছি।
মানুষ এত বেশি ধর্মান্ধ হয় কিভাবে? আর ধর্মীয় বিধান পালন করতে গিয়ে এত শো-অফ করতে হবে কেন? বিশ্বাসে ধীর, স্থির বা শান্ত থাকতে পারে না কেন মানুষ?
আমার মনে হয় এসব জ্ঞানের অভাব। অথচ মহানবী তাঁর বিদায়ী হজ্বের ভাষনে বলেছেন, ”জ্ঞানীর কলমের কালি শহীদের রক্তের চেয়েও মূল্যবান। জ্ঞান অর্জন প্রত্যেক নর-নারীর জন্য ফরয, কারন জ্ঞান মানুষকে সঠিক পথ দেখায় । জ্ঞান অর্জনের জন্য প্রয়োজনে তোমরা চীনে যাও।”
বলা যায়, যথাযথ জ্ঞানের অভাবেই ধর্মীয় সংঘাত বাড়ছে। ধর্মীয় উগ্রপন্থায় ঝুঁকে পড়ছে অনেকেই। সংঘাত বা হানাহানি চলছে সারা পৃথিবীতেই। বাংলাদেশেও ধর্মীয় উগ্রপন্থার প্রবনতা বাড়ছে জ্যমিতিক হারে। চারদিকে তাকিয়ে দেখি, বেশিরভাগ মানুষ ধর্মান্ধ, প্রাথমিক পর্যায়ের র্যাডিক্যাল, ডাক আর সুযোগ পেলেই যেন ধর্মের জন্য ভিন্ন ধর্মালম্বী বা মতালম্বীদের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়বে।
ওহ! আমি বেশি কিছু চাই না, শুধু শান্তি চাই, শান্তি।