শ্রীলঙ্কায় নিহতের সংখ্যা কমে আসছে। ৩৫৯ থেকে ২৫৩। ভুল করে সংখ্যা কাউন্ট বেশি হইছিল। শ্রীলঙ্কা, সবকিছুতেই তুমি এত বেখেয়ালি কেন?
এদিকে কলম্বোর নেগোম্বোতে যাতা অবস্থা শুরু হইছে। মুসলিমদের ঘরবাড়িতে হামলা হইতেছে। সাতশ’ মুসলিম তাদের ঘরবাড়ি ছাইরা পুলিশ প্রহরায় নিরাপদ আশ্রয় নিছেন।
এই খবর নিঃসন্দেহে ইসলামিক কট্টরপন্থীদের মনে আঘাত হানবে। শ্রীলঙ্কাসহ বিভিন্ন দেশে কট্টর মুসলিমরা এর পাল্টা জবাব দেয়ার চেষ্টা করবে। তার মানে এইটা কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রন করতে না পারলে ইসলামিক জঙ্গিদের পালে নতুন বাতাস লাগবে।
কিন্তু কট্টরপন্থী ইসলামিকদের আরেক দল আবার এই ঘটনায় তালিয়া বাজাবে আর মনে মনে বা প্রকাশ্যে বলবে, ঠিকই আছে, উচিত শিক্ষা হইতেছে।
কারন শ্রীলঙ্কান স্থানীয়দের দ্বারা হামলার শিকার হওয়ারা আহমদীয়া সম্প্রদায়ের। যাদের পাকিস্তান থেকে রীতিমতো আইন করে অমুসলিম ঘোষনা করে বের করে দেয়া হইছে। মক্কা-মদীনাও তাদের জন্য নিষিদ্ধ। জীবন আর মতাদর্শ বাঁচাইতে শ্রীলঙ্কায় তারা রিফিউজি অবস্থায় আছে।
বাংলাদেশেও আহমদীয়াদের রাষ্ট্রীয়ভাবে অমুসলিম ঘোষনা করতে চাপ সৃষ্টি করতে চাইছে কট্টরপন্থী ও হেফাজতি-কওমীরা।
সবচেয়ে কষ্ট লাগতেছে শ্রীলঙ্কার আহমদীয়া সম্প্রদায়ের একজনের কথা শুনে। তিনি বলতেছেন, “পাকিস্তানে লোকজন আমাদের অমুসলিম বলে মারছে। আর এইখানে আমাদের মারতেছে মুসলিম বইলা।”
আহা, দুনিয়ায় সবাই সবাইরে ধর্ম আর মতাদর্শ দিয়া বিচার করতেছে, মানুষ হিসাবে না। অথচ আগে তো মানুষ, তারপর ধর্ম, রীতিনীতি বা মতাদর্শ।
অমানুষ হইয়া ধর্ম পালন করে কী হবে?
আরেকটা কথা।
শ্রীলঙ্কার আত্মঘাতি জঙ্গিদের জানাযা বা কবর না দেয়ার সিদ্ধান্ত নিছেন স্থানীয় লিবারেল মুসলিম সম্প্রদায়।
সেইটা নিয়াও বিতর্ক শুরু হইছে। যারা ইনিয়ে-বিনিয়ে ইসলামিক জঙ্গিদের কোনো ধর্ম নাই বা তাদের ইসলামিক বলতেছি কেন এই প্রশ্ন করতেছিলেন, তারাই এখন নানাভাবে ইসলামিক রীতি অনুযায়ী জানাযা ও দাফনের পক্ষে বলতেছেন। বিচার আল্লাহর হাতে ছাইড়া দিতে আবেদন করতেছেন তারা।
তো বিচার যদি আল্লাহই করেন, তাহলে তুমি কে হে এরে কাফের বলে মারো, ওরে অমুসলিম ঘোষনা করো, একদলরে খারিজ করো, আরেকজনরে বেদাত বলো?
আসুন, হানাহানি, উগ্রপন্থা, অন্যের মতবাদকে খারিজ করা বা নিজের মতবাদ চাপিয়ে দেয়ার প্রবণতা বাদ দিয়ে শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান করি। ধর্ম-বর্ণ-জাত নির্বিশেষে পরস্পর পরস্পরকে শ্রদ্ধা করি। মানুষকে আগে মানুষ হিসেবে গন্য করি।
জঙ্গিবাদ নিপাত যাক।
ছবি: শ্রীলঙ্কার আহমদীয়া সম্প্রদায়, দ্য গার্ডিয়ান।